আমেরিকার সাথে যুদ্ধ করার ক্ষমতা কোন দেশের আছে কিনা?

মুক্তিযুদ্ধ কারা করেছে? দেশের সাধারণ জনগণ। সকল যুদ্ধে এমন পরিস্থিতি হয়। শুধুমাত্র সেনা বাহিনী দিয়ে যুদ্ধ হয় না। সাধারণ মানুষও যুদ্ধে নামে। আসলে সাধারণ মানুষ যোগ না দিলে যুদ্ধ পরিপূর্ণ হয় না।

সেনাবাহিনী সদস্য সবাই যুদ্ধে যোগ দিলেও, সবাই কিন্তু অস্ত্র হাতে যুদ্ধ করে না। বিভিন্ন সদস্যর বিভিন্ন দায়িত্ব থাকে। কেউ তাঁবু বানায়, কেউ ম্যাপ আকে, কেউ রান্না করে, কেউ চিকিৎসা করে। এভাবে বিভিন্ন মানুষ বিভিন্ন কাজ করে। সবাইকে একসাথে নিয়েই সেনাবাহিনী। সাধারণ মানুষ যখন যুদ্ধে নেমে পড়ে, তখনও একই পদ্ধতি চলে। সবাই যুদ্ধে অংশ নেয় ঠিকই, তবে সবাই বন্দুক হাতে গোলাগুলি করে না।


মুক্তিযুদ্ধর সময় তেমনই হয়েছে। গ্রামের বালক মুক্তিযোদ্ধাদের পথ চিনিয়ে দিয়েছে, গ্রামের মোড়ল মুক্তিযোদ্ধাদের আশ্রয় দিয়েছে, অমুক তাদের জন্য রান্না করেছে, গ্রামের ডাক্তার বিনা পয়সায় চিকিৎসা করেছে, মাঝি বিনা পয়সায় তাদেরকে নদীর পার করেছে। গ্রামের ভবঘুরে পাগল মিলিটারী আগমনের খবর এনেছে। এভাবে, অস্ত্র হাতে না নিয়েও, সবাই যুদ্ধে অংশ নিয়েছে।


সাধারণ মানুষের যুদ্ধে অংশ নেবার বিষয়ে আমেরিকা দেশটা পিছিয়ে আছে। ওদের দেশে ট্রেনিং-প্রাপ্ত যোদ্ধারা খুবই দক্ষ। কিন্তু সাধারণ মানুষ সেভাবে যুদ্ধে অংশ নিতে পারবে না। ওদিকে, এই বিষয়ে এশিয়ার মানুষেরা খুবই এগিয়ে। এশিয়ার সাধারণ মানুষ, যুদ্ধে অবদান রাখতে পারবে। সেটার বাস্তব উদাহরণ আমাদের মুক্তিযুদ্ধে দেখা গেছে। আমেরিকাতে এই জিনিসটা এখনো বাস্তবে দেখা যায়নি, কারণ সকল যুদ্ধ আমেরিকার বাইরে হয়। ওদের দেশে যুদ্ধ হলে দেখা যেতো ওরা কতটা পারে।


পারমাণবিক অস্ত্র কতগুলি আছে, সেগুলো গুনে দেশের শক্তি বিচার করে। দুঃখের ব্যাপার, বিশ্বে যত পারমাণবিক অস্ত্র আছে, সেটার ৪ হাজার ভাগের এক ভাগ দিয়েই পৃথিবী ধ্বংস করা যায়। অর্থাৎ, পারমাণবিক হামলা শুরু হলে, এমনিতেই দুই পক্ষ শেষ হয়ে যাবে। তাই ওটা সংখ্যায় বেশী থেকে কোন লাভ হয় না। পারমাণবিক অস্ত্র বেশী থেকে, এখন লাভ হচ্ছে, সেটা হলো, প্রতিপক্ষকে ভয় দিয়ে রাখা যাচ্ছে। তবে যুদ্ধে ওটা দিয়ে লাভ হবে না। দুই পক্ষই মরবে।


আমেরিকা প্রায় সকল যুদ্ধে জয়ী হয়ে, বিশ্বের শীর্ষ অবস্থানে আছে। এটার জন্য তাদের সামরিক শক্তির চেয়ে বেশী কার্যকর হলো তাদের আর্ন্তজাতিক রাজনীতি। ছলে বা কৌশলে, তারা জিতবে। আমেরিকার এই রাজনীতি বোঝানোর জন্য একটি গল্প প্রচলিত আছে। এই গল্পটিও আমেরিকানরা বানিয়েছে।


একবার আন্তর্জাতিক কুকুর কুস্তির আয়োজন করা হলো। সেই কুস্তির আগে সকল দেশেই কয়েক বছর ধরে কুকুর ট্রেনিং দিয়েছে। সেই কুস্তি প্রতিযোগিতায়, আমেরিকার কুকুরটি অন্য দেশের কুকুরকে একেবারে ছিড়ে টুকরো করে ফেলেছে। ভারত, চিন, ইত্যাদি দেশ মনে করেছে, তাদের কুকুর হয়তো নিম্ন মানের ট্রেনিং পেয়েছে। কিন্তু জার্মান, জাপান, এসব দেশ বিষয়টা মানতে পারছে না। কারণ তারা খুব ভালো ট্রেনিং দিয়েছে। আমেরিকার কুকুরটি কিভাবে সকল কুকুর মেরে ফেলেছে, সেটা তারা বুঝতে পারলো না। যাই হোক, আমেরিকার কুকুরটি অপরাজিত চ্যাম্পিয়ন।


প্রতিযোগিতা শেষে, জার্মান ও জাপান দলের ম্যানেজার, আমেরিকার দলের ম্যানেজারকে জিজ্ঞাসা করলো - আমরা এই কয়েক বছর ৫০+ জন বিশ্বসেরা ট্রেইনার দিয়ে, অনেক খরচ করে, এসব কুকুর ট্রেনিং দিয়েছি। তোমরা কতজন দিয়ে ট্রেনিং দিয়েছ? কত খরচের করেছ? তোমাদের কুকুরটি অন্য সকল কুকুরকে কাগজের মতন ছিড়ে ফেলেছে কিভাবে?


আমেরিকার ম্যানেজার উত্তর দিলো - আমরা কুকুরের ট্রেনিং দেইনি। আমাদের দেশের মাত্র তিনজন প্লাস্টিক সার্জন (ডাক্তার) মাত্র ছয় মাস চেষ্টায়, একটি নেকড়ে বাঘকে কুকুরের মতন দেখতে বানিয়েছে।


এখানে বোঝার বিষয়- প্রতিযোগিতায় সবই কুকুর নিয়ে গেছে, কিন্তু আমেরিকা নিয়েছে বাঘ। ওরা জিতবেই। যুদ্ধে সবরকম রাজনীতিই চলে। যার রাজনীতি যত শক্তিশালী, সে তত বেশী জিতে।


সম্মুখ যুদ্ধ শুরু করলে, আমেরিকা চীনের সাথে পারবে না। এমনকি ভারতের সাথেও পারবে না। কিন্তু, আমেরিকার অসাধারণ রাজনীতির জন্য, তারা বিশ্বে শীর্ষ অবস্থান দখল করে আছে। রাশিয়ার মতন এক শক্তিশালী দেশকে শুধুমাত্র রাজনীতি দিয়েই দুর্বল করে ফেলেছে।



No comments

Powered by Blogger.